সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সৌদি সরকারের অনুরোধে সেখানে অবস্থানরত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নের বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মতি দিয়েছে। এই রোহিঙ্গারা বহু বছর আগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিল। সম্প্রতি সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ ঢাকা সফরকালে বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর আগে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন প্রচেষ্টার অগ্রগতি জানতে চেয়েছে দেশটি। সৌদি আরব ওয়াদা করেছে, রোহিঙ্গা প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন করা হলেও তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না। সৌদি আরবে থাকার জন্যই তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সত্তরের দশকের শেষার্ধে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে সৌদি আরবে যায়। পাকিস্তান সরকার তাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়ে পাঠালেও বাংলাদেশ সরকার সরাসরি পাসপোর্ট দেয়। এ কারণে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য দেশটি চাপ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারও সৌদিপ্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণের কথা ভেবে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে রাজি হয়েছে।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা তো ৬৯ হাজার নয়। আরও অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে তারা যে বাকি রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে বলবে না, তার নিশ্চয়তা কী? প্রায়ই দেশে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র করার খবর সংবাদমাধ্যমে আসে। কেউ কেউ বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে আটকাও পড়েছেন।
এ অবস্থায় সৌদিপ্রবাসী রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করা আমাদের জন্য বড় বিপদ হয় কি না, সেটাও দেখতে হবে। দেশটিতে প্রায় ২৮ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন। সরকার তাঁদের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফিরে না আসতে পারে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ এখন কঠিন সমস্যার মুখোমুখি। এই মুহূর্তে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে, যাদের বড় অংশ এসেছে ২০১৭ সালে। অতীতের ভুল যে তাড়া করে, রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিয়ে সৌদি আরবে পাঠানোই তার প্রমাণ। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান অধিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ১৯৭৬-১৯৭৯ সালে যাওয়া রোহিঙ্গাদের কথা বলেছেন। কিন্তু এরপরও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশ হয়ে সৌদি আরবে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট করল কীভাবে? যেখানে দেশের প্রকৃত নাগরিকেরা পাসপোর্ট করতে নানা রকম হয়রানির শিকার হন, সেখানে রোহিঙ্গারা অনায়াসে পাসপোর্ট পেয়ে যায়। এর পেছনের রহস্যটাও খুঁজে বের করা দরকার।
সরকার যখন সৌদিপ্রবাসী রোহিঙ্গাদের সেই দেশে থাকা নিশ্চিত করতে ৬৯ হাজার পাসপোর্ট নবায়ন করতে যাচ্ছে, তখন ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে আলোচনায়ও কোনো ইতিবাচক বার্তা মেলেনি। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখনো হয়নি। তাহলে লাখ লাখ রোহিঙ্গার দায় বাংলাদেশকেই বয়ে বেড়াতে হবে?
মনে রাখতে হবে, এই রোহিঙ্গারা আমাদের জনজীবনে, পরিবেশ ও অর্থনীতিতেই মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেনি; মাদকেরও বিস্তার ঘটাচ্ছে।